একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু

লিখেছেন লিখেছেন Md Arif ২০ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:৫৪:৩১ দুপুর

একজন মাররুফা জান্নাতের কথা লিখছি,

একটি স্বপ্নের অপমৃত্যুর কথা,

একটা আশার আলো স্বমহিমায় প্রস্পুটিত হওয়ার

পূর্বে নিবে যাওয়ার কথা,

একটি কলি ফুল না হতে ঝরে পড়ার কথা,

একটি সূর্য হেঁসে উঠার আগে মেঘের

কোলে হারিয়ে যাওয়ার কথা।

এইতো সেদিন, মাস খানেক কিংবা তার কিছুদিন

আগে সদ্য লিখিত একটি কবিতা ফেইসবুকের একটাগ্রুপে পোষ্ট করলাম।

প্রায় সাথে সাথেই

একটি মেয়েলী আইডি থেকে লাইক, কমেন্টস্ সহ

বন্ধুত্বের অনুরোধ।

মেয়েদের থেকে লুকিয়ে থাকার স্বভাবযাত

বৈশিষ্টের কারনেই প্রায় দুদিন ঝুলিয়ে রাখলাম।

দুদিন পর অনেকটা অনুনয়ের সুরে please accept

me,,, টাইপের একটা মেসেজ আসলো।

যাইহোক, ফেইকের ভুত মাথায় চেপে এভাউটে বার

বার চোখ বুলিয় অবশেষে এক্সেপ্ট করলাম।

এরপর প্রায়ই ইনবক্সে hi/hallow থেকে শুরু

করে ব্যাক্তগত কুশলাদি বিনিময় হত।

তো গতকালকের ইনবক্স আলাপটি ছিল অনেকটা এই

রকম,,,,,,,

মেয়ে:- হাই, ভাইয়া কেমন আছেন?

আমি:- হুম ভাল, তুমি?

-- খৃব খারাপ!

--কেন?

--বাসায় বিয়ের কথা চলছে! অনেকটা চুড়ান্ত

পর্যায়ে।

--এটাতো খুশির খবর!! মন খারাপের কি আছে?

--আসলে ভাইয়া, আমি পড়ালেখা করতে চাই।

তাছাড়া ছেলেকে আমার পছন্দ না।

--ছেলে কি করে?

--সম্ভবত ইটালি থেকে আসছে।

-- বাহ! তোমারতো ভবিষ্যত উজ্বল। ছেলে পছন্দ নয়

কেন?

-- আসলে ভাইয়া ওর বয়স অনেক বেশী। প্রায় ত্রিশ/

পঁয়ত্রিশ হবে।

রীতিমত একটা শক খেলাম। সদ্য দশম

শ্রেনীতে পড়া ১৬বছরের একটা মেয়ের পাশে ত্রিশ/

পঁয়ত্রিশ বছরের মোধ্যবয়স্ক একজন লোককে কিছুতেই

দাড় করাতে পারলাম না। শতত কল্পনার জগতে ধোল

খেয়েও না। অবশেষে তার পুনরায় নকে সম্বিৎ

ফিরে পেলাম,,,,,,,

--ভাইয়া আমি এখন কি করব, কি করা উচিৎ? কিছুই

যে মাথায় আসছে না। কিছু একটা শাজেশান্স দেন

আমায়।

--তোমার আব্বু সাথে কথা হয়েছে এ ব্যাপারে?

--আমার সাথে হয়নি, আম্মুর সাথে হয়েছে। আর আম্মু

যা বলেন আব্বু তার বাইরে কিছুই করেন না।

--তুমি তোমার

আব্বুকে পার্সোনালী ব্যাপারটা বুঝিয়ে বল।

এতে হয়তো কাজ হতে পারে।

আসলে কাজ হতে পারে কিনা আমার জানা নেই।

কারণ তার সাথে কথা বলে তার আব্বু

সম্পর্কে যা জানলাম তার সারমর্ম হল এই

"সমাজে কিছু লোক আছে বিয়ের পর বউয়ের কথার

বাইরে ভাতের লোকমাটি ধরার দুঃসাহসটিও রাখেন

না। তার পিতাও এই শ্রেণীভুক্ত।"

তবু জান্নাতের 'ভাইয়া' ডাকের মোধ্যে সাজেশান্স

পাওয়ার পরম একটি আকুতি ছিল। তাই এই

সাজেশান্স। এটি দায়সারা গোচের সাজেশান্স।

আমার জানা নেই এই সাজেশান্স কতটুকু কাজ

করবে বা আদৌ কাজ করবে কি না।

নাকি একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু অপেক্ষমান।

তা আদৌ আমার জানা হয়না,,,,

ও হ্যাঁ, সেই স্বপ্নের নাম 'মারুফা জান্নাত'।

সুনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেনীর

ছাত্রী।

২০১৬ শিক্ষা বর্ষের এসএসসি পরীক্ষার্থী।২০১৩

সালে জেএসসিতে A+ পেয়ে ডাক্তার হওয়ার

স্বপ্নকে বুকে লালন করে Science গ্রুপ নিয়ে পড়ছে।

কোন এক আত্বিয়ের মাধ্যমে ইটালি প্রভাসী বরের

সন্ধান পেয়ে তার মা মেয়েকে প্লেনে উড়ানোর

চিন্তায় বিভোর হয়ে বিয়ের জন্য আদাজ্বল

খেয়ে নেমেছে। তিনি জানার প্রয়োজন মনে করছেন

না যে তার ১৬বছরের কিশোরী মেয়েটি ত্রিশ/

পঁয়ত্রিশ বছরের মোধ্য বয়স্ক একজন লোকের

সাথে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা।

বিয়েটা যদি হয়েই যায় সেই স্বামী স্ত্রীর

সম্পর্কটি ভালবাসার হবে নাকি শোষক শোষিতের

হবে তার জানা নেই।

আমাদের দেশে মেয়েদেরকে তাদের জীবন

সাথী নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হয়না।এ

ব্যাপারে অধিকাংশ অভিবাবকের বক্তব্য হল "মেয়ের

এখনো ভাল মন্দ বুঝার বয়স হয়নাই!"

যদি প্রশ্ন করি "তাহলে মশায় এই অবুঝ

মেয়েটাকে বিয়ে দিচ্ছেন কোন বুঝে?"

উত্তর হয়তো কিছু একটা দিয়ে দিবেন বটে,

তা আসলে কতটা 'উত্তর' হবে সেটাই প্রশ্ন।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই সমাজের চিত্র এমন

হবে কেন? যেখানে স্বয়ং রাসূল স: তার প্রিয়

কন্যা ফাতেমা রা:কে আলী রা: এর সাথে বিয়ের

ব্যাপারে সম্মতি নিয়েছিলেন,

এবিষয়টি কে নাজানে?

আসলে প্রশ্নটা কে না জানে,? না হয়ে কয়জন মানে?

হলে পারফেক্ট হত বলে মনে হয়।

আমি লিখছি একজন 'মারুফা জান্নাতের 'কথা।

একটি স্বপ্নের অপমৃত্যুর কথা। একজন ডাক্তারের

নিজের অজান্তে গৃহবধূ হয়ে যাওয়ার কথা।

জানি, এলেখা মারুফা জান্নাতের

বিয়ে হয়তো ঠেকাতে পারবেনা। হয়তো ৩০/৩৫

বছরের একজন

লোককে স্বামী হিসেবে স্বিকৃতি দিয়ে দিতে হবে।

কিন্তু কেন,,,,,,,,,,????????

কেন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আন্ডার মেট্রিক

গৃহবধূ হয়ে যেতে হবে?

কেন অনিচ্ছা সত্বেও ৩০/৩৫বছরের একজন আইবড়

লোককে স্বামীর আসনে বসাতে হবে?

মারুফা জান্নাতকে এখনি বিয়ে দেওয়ার কি এমন

প্রয়োজন ছিল?

কিংবা মারুফা জান্নাতের

সৌদি প্রবাসী পিতা কি তার

মেয়েকে ডাক্তারি পড়িয়ে একজন ডাক্তারের গর্বিত

পিতা হতে পারতেন না?

রবীন্দ্রনাথ তার হৈমন্তি গল্পে দারুন

একটা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,,,"আমার সন্দেহ

হয়, অধিকাংশ লোকে স্ত্রীকে বিবাহমাত্র করে, পায়

না এবং জানেওনা যে পায়নাই; তাহাদের স্ত্রীর

কাছেও আমৃত্যুকাল এখবর ধরা পড়েনা।"

কে জানে, মারুফা জান্নাতের জন্যও হয়তো এমন

একটি জীবন অপেক্ষা কলছে।

বিষয়: বিবিধ

১১৫৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

300937
২০ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : এটাই হয়ে আসছে জনম জনম ধরে কিছু করার নেই।
300961
২০ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩১
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
301020
২০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৩০
Md Arif লিখেছেন : আসলেই কি আমাদের কিছুই করার নেই?

নাকি শুধু দায়িত্ব এড়ানোর চ্যাষ্টা করছি?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File